
এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী
আমরা প্রতিদিনেই পত্রিকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি সহ বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের খবর দেখতে পাই। কিন্তু কেউ কি কখনো ভেবেছি! দেশে দুর্নীতিবাজদের দমনের জন্য নির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও, কেনো দিন- দিন দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেনই বা মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চাঁদাবাজি,চুরি, ডাকাতির মতো ভয়ানক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে।কিন্তু সমাজের এই অসামাজিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড গুলো তথ্য উচ্চারণ করতে গেলেই সৃষ্টি হয় নানান প্রশ্ন। কারণ হচ্ছে এরকম অসামাজিক কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে কর্মহীনতা। সমাজের সকল অসামাজিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র কারণ হচ্ছে সঠিক কর্ম ব্যবস্থা না থাকা।
একজন কর্মহীন মানুষের জীবন যে কতটা বিষন্নতার হয়, তা লিখার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তবুও আপনাদের সামনে আমি আমার সাধারণ জ্ঞানের আলোকে, এদেশের পূর্বে উল্লেখিত বঞ্চিত কর্মহীন জাতির কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তুলে ধরার চেষ্টা করেছি একজন কর্মহীন মানুষ সমাজের লাঞ্ছনা এবং অবহেলার কারণে সমাজে কি-রকম অসামাজিক কর্মকান্ডের সৃষ্টি করতে পারে।
একজন মানুষ কর্ম ইন্তে থাকার কারণে, তার জীবনে নেমে আসে হাজারো অবহেলার জোয়ার। সব মানুষগুলোরেই মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম থাকে।এবং সমাজের প্রতিটি মানুষেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে গিয়ে হৃদয় জমে থাকা কষ্টের কথা বলার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে থাকে।কিন্তু এ দেশের কর্মহীন মানুষ গুলো কখনো, তাদের হৃদয়ে চেপে থাকা কান্নাটা প্রকাশ করতে পারে না। কারণ একজন কর্মহীন মানুষের কষ্ট প্রকাশ করাটা, সমাজ এবং পরিবারের কাছে হাস্যকর মনে হয়। একজন কর্মহীন মানুষ সমাজ ও পরিবারের কাছে ভারী বোঝা। শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও সমাজের মানুষের কাছে, অবহেলিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
সূর্যের পৃথিবীটা যেমন আঁধারে ঢাকা থাকে, সকল প্রাণীরাই তখন চলাফেরা বন্ধ করে দিয়ে, সবাই সবার বাসস্থানে চলে যায়।চারিদিক নিরব স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ পৃথিবীতে আদরে ঢাকা পরে গেছে। যেখানে আলোর সরাসরি নেই, সেখানে প্রাণীদের চলাচল খুবিই কম। কারণ আধার কে মানুষ বিশ্রামের জন্য বেছে নিয়েছে।তাই আঁধারের জন্য নির্ধারিত সময়টা নিঃসঙ্গতায় কেটে যায়,আধারকে দেওয়ার মত সময় কারো কাছে থাকেনা। সবাই চায় একটু আলো,একটা সুন্দর জীবন। ভালো পাওয়া বেঁচে থাকতে কর্মের প্রয়োজন। সূর্যহীন পৃথিবী যেমন সবার কাছে মূল্যহীন হয়ে পরে,একজন কর্মহীন মানুষের জীবনটাও সূর্যহীন পৃথিবীর মতোই আঁধারে ঢাকা পরে।
একজন মানুষ যখন কর্মহীন অবস্থায় বেকারত্ব জীবন যাপন করে, তখন তিনি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে। রাত পোহালেই শুনতে হয় নানান রকম ধিক্কার। যা অভিশপ্ত বাণীতে রূপ নেয়। পারিবারিক অবহেলা ও সমাজের মানুষের বিভিন্ন মন্তব্যে জীবনটা একটি বিষাক্ত জীবনে পরিণত হয়। যার কারনে বাধ্য হয় অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করতে।
প্রশ্ন:- একজন মানুষ কখন অসৎ পথে অর্থ উপার্জনের রাস্তা বেছে নেয়?
একজন মানুষ যখন যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ার পরেও, কর্মহীনতায় ভোগে। কর্মের সন্ধানে ছুটে চলে এক শহর থেকে অন্য শহরে। শত চেষ্টা করার পরেও যখন ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। ভালো কোনো পরিবার তার সাথে সম্বন্ধ পর্যন্ত করতে চায়না। টাকার অভাবে করতে পারে না অসুস্থ মা বাবার সঠিক চিকিৎসা। চোখের সামনে অসুস্থ মা-বাবা ওষুধের অভাবে অসুস্থতার জীবন নিয়েই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। বেড়ে যায় আত্মীয়স্বজনদের অবহেলা সমাজের মানুষের লাঞ্ছনা, স্ত্রীর দুর্ব্যবহার, সন্তান-সন্ততিদের চাহিদা পূরণের অভাব, প্রতিদিনেই পারিবারিক ঝগড়া। সবশেষে দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ হয়, জীবনে নেমে আসে একটি অমানিশার কালো ছায়া। আয়না খুঁজে কোনো সঠিক পরামর্শ। অতিরিক্ত মানসিক চাপে হারিয়ে যায় মানসিক ভারসাম্য। সকল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে হৃদয়ে একটাই ভাবনা জাগে, অর্থই জীবনের সব। অর্থই সর্ব সুখের মূল। তখন সে বাধ্য হয়ে অসৎ উপার্জনের রাস্তা খুঁজে নেয়।
যেখানে অর্থ বেশি পাওয়া যায়, সেখানে ছুটে চলে।অর্থের জন্য সবকিছুই করতে পারে। অর্থের নেশায় পুলিশের চোখে হয় ফেরারি। অর্থের পিছে ছুটতে -ছুটতে ফুলের মতো সুন্দর জীবনটি, বেকারত্বের মরণশীল আক্রান্ত হয়ে একটি ধ্বংসাত্মক জীবনের রূপান্তরিত হয়।জীবনে চলে আসে কঠিন আঁধারে ঢাকা পথ।পাল্টে যায় জীবনের মোড়। নানা রকম কলঙ্কের চাপে কলুষিত হয়ে যায়, এক সময়ের একটি ফুলের জীবন।আমি ধিক্কার জানাই সেই সমাজকে, যেই সমাজে মানুষের বাহ্যিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা হয়। হৃদয়ে চেপে থাকা বুকফাটা কান্নাটা কেউ শুনতে চায় না। আমি ধিক্কার জানাই সেই সমাজকে, যেই সমাজের সামনে কি সুন্দর জীবন ধ্বংসের পথে চলে যায়। অথচ তারা ঠাট্টা উপহাস করে। সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার পরিবর্তে, ঠাট্টা উপহাস করে ধ্বংস করে দেয় একটি জীবন। সেই উপহাস কৃত সমাজকে উদ্দেশ্য করে কাব্যের ভাষায় বলতে চাই,
সময়ের ব্যবধানে ব্যবহার করো না
মানুষের দুর্বলতাকে,
অবহেলার দৃষ্টিতে দেখো না কভুও
বিপদগ্রস্ত মানুষকে।
মানুষের জীবন নিয়ে ভাবতে শিখো
করো না ঠাট্টা উপহাস,
তোমাদের ঠাট্টা উপহাসের কারণে
সুন্দর জীবনে করতে পারে অমানিশা বাস।
বর্তমান সমাজের একশ্রেণীর মানুষ, যারা শিক্ষিত বেকারদের কে নিয়ে ঠাট্টা উপহাস করে, অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে।তাদের উদ্দেশ্যে আমার অনুরোধ বাণী, জেনে রাখবেন একটি সমাজ চাইলে একটি সুন্দর জীবন গঠন করতে পারে। আবার একটি সমাজ চাইলে একটি সুন্দর জীবন ধ্বংস করতে পারে। দুটুর জন্যই প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা যখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে ব্যবহার করবো,অবশ্যই সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর জীবন সুন্দর জীবনে পরিণত হতে পারে। মুক্তি পেতে পারে অবহেলিত জীবন থেকে। সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে একটি পরিবার। আর আমরা যখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খারাপভাবে ব্যবহার করবো, তখন আমাদের কারনে চলে যেতে পারে একটি প্রাণ, ধ্বংসাত্মক জীবনে পরিণত হতে পারে একটি পরিবার। কারণ অবহেলার জীবনটা খুবই কষ্টের এবং বেদনাদায়ক হয়। কেউ সেই জীবনের মোকাবেলা করার চেষ্ঠা করে। আবার কেউ সমাজের একশ্রেণীর মানুষের অবহেলা লাঞ্ছনা ধিক্কার মেনে নিতে না পেরে, নিজের জীবনটাকে একটি অভিশপ্ত জীবন মনে করে। যার কারনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে যায় সব অকালে।আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়।তাই একটি সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য, রাষ্ট্র গঠনের জন্য, পরিবার গঠনের জন্য, প্রয়োজন আমাদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।