নির্বাচন,সংস্কার, বিচার- জনগন কি চায়?


এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী

যে কোন রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি জনগন।জনগণ যদি সচল থাকে, রাষ্ট্র উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়। আর জনগণ যখন সচেতন হয়,তখন রাষ্ট্রের কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয় না।আর সেইজন্য রাষ্ট্র সংস্কারের আগে জনগনের মনোভাব বোঝা উচিৎ।

জনগন কি চায়? নির্বাচন,সংস্কার না বিচার!
উক্ত প্রশ্নের আলোকে, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমার গল্পের মূলভাব বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।

গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মতামত, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা। যে কোনো রাষ্ট্রের অগ্রগতি নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচন, কার্যকর সংস্কার এবং ন্যায়সঙ্গত বিচার ব্যবস্থার ওপর। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সঠিক বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে কোনটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? নির্বাচন, না বিচার?
এটাই হচ্ছে আজকের আলোচনার মূল বিষয়।
নির্বাচনের মাধ্যমে দলিয় সরকার গঠন করা বর্তমান দেশের জন্য যতটা আবশ্যক, তার চেয়েও বেশি জনগণের মতামত জানা আবশ্যক। বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালক কোন নির্বাচিত সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বারায় রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে । যে সরকার হচ্ছে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আর এই নিরপেক্ষ সরকারের কাছে থেকে জনতার চাওয়া হচ্ছে আগে বিচার পরে সংস্কার। জনগণ চায় একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে তাদের মতামত গুরুত্ব পাবে, এবং যেখানে দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান থাকবে না। জনগনেই রাষ্ট্রের মূলশক্তি, এটা গণতন্ত্রের ভাষা। আর আজ দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা গণতন্ত্রে গান গাই,কিন্তু গণতন্ত্র বোঝি না। বোঝি নিজেদের স্বার্থ। নির্বাচন কোনো রাষ্ট্রের সমস্যার সমাধান হতে পারে না,রাষ্ট্র সমস্যার সমাধানে চাই জনতার ঐক্য। আমরা মনে করে থাকি নির্বাচনেই রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্ণতা। আমার প্রশ্ন,
আসলে কি তাই? এরকম রাজনীতির রহস্য কি? জাতি কি তাদের রক্ত পিপাসুদের বিচার দেখতে পারবে?মূলত কি এর বাস্তবতা ? এরকম রয়ে যায় হাজারো প্রশ্ন, কিন্তু জবাব অত্যান্ত বেদনাদায়ক!

এই জাতি শোষিত অধিকার হারা জাতি।নির্বাচন মানেই দেশ ধ্বংসের নতুন পরিকল্পনা।এদেশে জনতার নির্বাচন মানেই অধিকার হরন করা। এদেশে কোনোকিছুই সঠিকভাবে চলে না। চলে নির্বাচনের নামে প্রহসন, সংস্কারের নামে লোক দেখানো পরিবর্তন এবং বিচারের নামে কালো টাকার ব্যাবসা, আইনজীবীদের বিভিন্ন তর্ক বিতর্ক যা জনগণের ইচ্ছাকে নিয়ে নাটক তৈরির মতো। কিন্তু ২৪শের জুলাই বিপ্লবের পরে এদেশের জনগনের একমাত্র দাবি হচ্ছে আগে বিচার পরে সংস্কার।

জনগণ চায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা কী দেখি? অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচন হয়ে উঠেছে একটি সাজানো নাটক, যেখানে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করা হয়, ভোট ডাকাতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। ফলে জনগণের ভোটাধিকার কেবলমাত্র কাগজে-কলমে রয়ে যায়, বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। জনগণ চায় প্রকৃত গণতন্ত্র, যেখানে তাদের মতামতই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এর কারন হচ্ছে বিগত ১৬ বছরের শোষন এদেশের মানুষের হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে,তার একমাত্র সমাধান বিচার। আমারও দাবি বিচার ছারা সংস্কার বা নির্বাচন কিছুই সম্ভব না। কারন হচ্ছে ২০০৯ সালে ইতিহাসের কালো অধ্যায়, বিডিয়ার বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যা,যা বিশ্ব বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২০১৩ সালে ইতিহাসের কলংকজনক অধ্যায় ২০১৩ সালে হেফাজত হত্যাকান্ড সহ অগনিত আলেম উলামার হত্যাকান্ডের সাথে বিগত সরকার জড়িত।যার যথেষ্ট প্রমান আছে। এখনও অনেক সন্তান বাবার অপেক্ষায়, বাবা-মা তাদের সন্তানদের অপেক্ষায় স্ত্রী তার স্বামীর অপেক্ষার প্রহর গুনছে। অনেক বোন বিয়ের পরের দিনেই পরতে হয়েছে বিধবার শাড়ি,কেও কেও লাশ পেয়েছে,কেও পেয়েছে পঙ্গুত্ববরণকারী সদস্য।আবার কেও আজও অপেক্ষায় আছে। সাংবাদিকদের হত্যা সহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মূলে শেখ হাসিনা। আর সর্বশেষ জুলাই গণহত্যা, যেই হত্যার শিকার হয়েছে ৪ মাসের শিশু বাচ্চার মা ও ২ বছরের শিশু,ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয় বিধবারক ঘটনা।এসব অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। সকল অপরাধের সঠিক বিচারে জনগনের মনে স্বস্তি ফিরে আসবে,আর তখনেই হবে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন। আপনাদের প্রশ্ন থাকতে পারে এসব এই সরকার কেনো? দলীয় সরকার করবে। তাই বলছি দলীয় সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পরে সকল অপরাধের ফাইল রাষ্ট্রীয় ফাইলের নিচে চাপা থাকবে,আর প্রসাসন হবে অভিনেতা,আদালতে হবে শুটিং। পেশাজীবী আইনজীবীরা সংলাপ করতে করতে যুগের পর যুগ পার হবে,স্বজনহারা আত্নীয়দের কবরে ঘাস গজাবে,কিন্তু বিচার হবে না। জ্বলন্ত উদাহরন সাগর রুনি হত্যা মামলা আজও চলমান। তাই রাষ্ট্র সংস্কারে প্রধান দায়িত্ব বিচার।
প্রশ্ন থাকতে পারে,তাহলে কি সংস্কারের প্রয়োজন নেই?
হ্যা,অবশ্যই। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার স্বার্ব-ভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আবশ্যক। তবে বোঝতে হবে, সেই সংস্কার কি লোক দেখানো পরিবর্তন নাকি বাস্তব উন্নয়ন?
একটি রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার অপরিহার্য। কিন্তু বাস্তবে সংস্কারের নামে যা হয়, তা অনেক সময় লোক দেখানো এবং সাময়িক হয়। জনগণ চায় এমন সংস্কার, যা সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে। তারা চায় এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো, যেখানে যোগ্যতা ও সততা অগ্রাধিকার পাবে, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি থাকবে না। কিন্তু সংস্কারের নামে যদি শুধুই বাহ্যিক পরিবর্তন দেখানো হয় এবং প্রকৃত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করা হয়, তবে জনগণের সেই চাহিদা কখনোই পূরণ হবে না।আবারও দেশ কোনো একটি শক্তির দখলে চলে যাবে,আর জনগন শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনবে,কখন আসবে বিজয়।

জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
জনগণ চায় একটি দেশ, যেখানে— ১. নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক। 2. সংস্কার হবে প্রকৃত অর্থে উন্নয়নমূলক, লোক দেখানো নয়। 3. বিচারব্যবস্থা হবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই তিনটি ক্ষেত্রেই জনগণ প্রায়শই প্রতারিত হয়। ফলে সাধারণ মানুষের হতাশা বাড়ে, এবং তারা রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
শেষকথা:-
একটি রাষ্ট্র তখনই টিকে থাকে, যখন জনগণের চাহিদা পূরণ হয় এবং তারা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি আস্থাশীল থাকে। নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারব্যবস্থার যদি প্রকৃত স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না যায়, তবে গণতন্ত্র কেবল কাগজে-কলমেই থাকবে, বাস্তবে তা কার্যকর হবে না। তাই জনগণের চাওয়া ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠন করতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন, প্রকৃত সংস্কার ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করাই একমাত্র পথ।