
এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী
কি অদ্ভূত জীবন। চোখের পলকে দিন চলে যায়,দেখতে-দেখতে মাস চলে যায়,কল্পনাতে চলে যায় বছরের পর বছর।অথচ সবকিছুই যেনো,একটি গল্প, একটি ইতিহাস, একটি কাল্পনিক সিনেমা। আমরা কিছুই ভাবি না। তবে যখন ভাবি জীবনের বৈচিত্রময় দিনগুলার কথা, তখন সবকিছুই কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয়। মনে হয় মানুষ একটি অদ্ভুত প্রাণী। পৃথিবীতে সব প্রাণীর চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ।
কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো? মানুষের জীবনের মূল্যায়ন কিভাবে হয়?
মানুষ ভিন্ন চিন্তার অধিকারী, জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশায় জড়িত মানুষ। যে যতো পায়, তত বেশি চায়। বিলাসবহুল বাড়ি,দামি গাড়ি, তার সাথে সুন্দর নারী। জীবন চলার ক্ষেত্রে কত কিছু প্রয়োজন। ব্যর্থতা এবং সফলতার মাঝে চলছে এক কোটি প্রতিযোগিতা। কে হবে সফল? বাস্তবতার আলোকে সব ভালো সেই কি সফল হতে পেরেছে?
এরকম হাজারো প্রশ্ন মনের গভীরে প্রতি-নিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে- মাঝে মনে হয় জীবন মানেই হলো,একটি যুদ্ধ ক্ষেত্র। যে যুদ্ধক্ষেত্রে, রক্তের পরিবর্তে মানুষের মাথার ঘাম পায়ে জরে। যে যুদ্ধক্ষেত্রে, অস্ত্রের পরিবর্তে ব্যবহার হয় চিন্তাশক্তি। কি কেহ অর্থের নেশায় দিবা রাত্রি পরিশ্রম করছে, কেহবা আবার রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য অবৈধ পন্থা বেছে নিয়েছে, আবার কেহ জীবনের স্বপ্ন অপূর্ন রেখেই, সফলতার পরিশ্রম চলমান অবস্থায় দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এটাই প্রকৃতির খেলা, নিয়তির লেখা নিয়ম। যা কোন দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবে না। এসব কিছু যখন ভাবি, তখন মাঝে- মাঝে পাগলের মত হাসি, হা-হা-হা-হা…।
01920125278
https://www.facebook.com/profile.php?id=61566362704865&mibextid=ZbWKwL
কি অদ্ভূত দূনিয়া,যেখানে রয়েছে মানুষ নামক অদ্ভুত প্রাণীদের বসবাস। মানুষ যে কতটা অসহায়, তা কখনো কেউ ভাবে না। দুনিয়ার রঙ্গ লীলায় পরে, মানুষ ভুলে গিয়েছে নিজের অস্তিত্বের কথা। ভুলে গিয়েছে এই জীবনের আনন্দটাই শেষ আনন্দ নয়,কারণ এই জীবনটাই হচ্ছে টিকেটবিহীন যাত্রীর মতো।কখন কোথায় নামবে, কেউ জানে না।
মানুষ কখনো ভাবে না, সৃষ্টিকর্তা কেন মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন?
কার কখন চলে যাবার ডাক আসবে সেটা মানুষ কখনো জানে না! পৃথিবীতে প্রতিটা প্রাণী জন্মের একটা সূত্রপাত রয়েছে, যেমন বড় দেখে ছোট। কিন্তু মৃত্যুর কোন সূত্রপাত নেই,ছোট থেকে বড় কখন কে মরবে , কোথায় কিভাবে মরবে, সেটা সৃষ্টি করতে ছাড়া কেউ জানে না। মানুষের জীবনটা হয়েছে ঘুড়ি মতো। ঘুড়ি আকাশের নিচে মালিক যখন উড়ায়,ঘুড়ি স্বাধীনভাবে উড়তে থাকে। মালিকের যখন ইচ্ছা, তখনেই ঘুড়ির উড়ার স্বাধীনতা শেষ হয়ে যায়। ঠিক তেমনেই মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন, এবং সেখানে দিয়েছেন ভিন্ন প্রজাতির, ভিন্ন পেশার মানুষ। ভিন্নরূপে রূপান্তরিত মানুষের জীবন। কেউ অগণিত টাকা পয়সার মালিক, আবার কেহ রাস্তার ভিখারী, কিন্তু এসব কিছুই সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষাটা রক্তের লোভে মানুষ হলে গিয়েছে। তারা একবারও ভাবে না, এই জীবনের আনন্দটা যে কোন সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। কারণ আমি স্বাধীন নই, আমার জীবনটা ঠিকেই স্বাধীনভাবে চলছে, কিন্তু সেই জীবনের নিয়ন্ত্রণ করছেন আল্লাহ তায়ালা। আমরা যে যেভাবে চলতে চাই, ঠিক উড়ন্ত ঘড়িটার মত সেভাবে আল্লাহ-তায়ালা আমাদের চলার সুযোগ দিচ্ছেন। তবে ক্ষণিকের জীবন, যেকোনো সময় আসতে পারে মরণ। এই দুনিয়ার আনন্দটা যারা সৃষ্টি কর্তার শিখানো, নিয়ম অনুযায়ী করবেন তারা অবশ্যই সফল। কারণ এই অস্থায়ী আনন্দের পরেই, সৃষ্টিকর্তা চাইলে তাদেরকে তাই ঠিকানায় সুখের ঘর বানিয়ে দিতে পারেন। আমরা যারা নিজেরা নিজের মত করে জীবনটাকে সাজিয়েছি, যে সৃষ্টি কর্তা আমাদের জীবন দান করেছেন, নিয়ম বেঁধে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, আর সেই নিয়ম অমান্য করে আমরা আমাদের মনগড়া মতবাদের চলছি,বুঝে নিতে হবে আমাদের সেই মনগড়া মতবাদের আনন্দটা শুধু এই অস্থায়ী দুনিয়ার জন্যই। দিন শেষে আমরাই ব্যর্থ। কারণ হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্য আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার আইন ভঙ্গ করে, নিজেদের চলাফেরা করেছি।অবশ্যই আমাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত, যেখানে রয়েছে আগুন এবং মানুষের সম্পর্ক। সেখানে মানুষেই হচ্ছে আগুনের একমাত্র খাদ্য। এসব কিছু চিন্তা করার পরে,দুনিয়ার বুকে মানুষ যে কতটা অসহায় তা আর বুঝতে বাকি থাকে না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জ্ঞানী স্বাধীন জাতির নাম হচ্ছে মানুষ। চাঁদের উপর রয়েছে নানা রকম দায়িত্ব, এবং সেই দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা। মানুষ ব্যতীত যে প্রাণী গুলো রয়েছে, এসব কিছুই মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ আল্লাহ-তায়ালা সেই প্রাণীগুলোকে মানুষের উপকারের জন্যই পাঠিয়েছে। সেই প্রাণীগুলোর রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ তালাই করে দিচ্ছেন। আর মানুষকে বলেছেন,
আমি দিনকে আলোকিত করে দিয়েছি জীবিকা সরবরাহের জন্য, রাতকে আবরণ দিয়ে ডেকে দিয়েছি আরাম-আয়েশের জন্য (সূরা নাবা :-আয়াত,৯-১১)
উক্ত আয়াতের বিশ্লেষণ অনুযায়ী পাওয়া যায়, প্রতিটা মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ-তায়ালা করে দিয়েছেন। এবং সেই রিজিকের সন্ধান যদি মানুষ আল্লাহতালার উপর বিশ্বাস রেখে করে, তাহলে সেখানে আল্লাহ তায়ালা রিজিক তালাশে সহযোগিতা করেন। এবং উত্তম বরকত দান করেন। আর বর্তমান মানব সভ্যতা রিজিকের সন্ধান করছে, রিজিকের পিছনে দৌড়াচ্ছে, কেহবা আবার অধিক সম্পদের মালিক হয়ে পশু পাখি লালন পালন করছে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে, সবকিছুর পরে মানুষ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, ভুলে গিয়েছে মানুষ সৃষ্টিকর্তার অধীনস্থ জীব। মানুষ ভুলে গিয়েছে এই জীবনের পরেও রয়েছে আরেকটি জীবন, যে জীবনের কোন মৃত্যু নেই। মানুষ নিজেও জানে না, তার জীবনের মূল্য কার কাছে কতটুকু, এবং কে কিভাবে সেই জীবনকে মূল্যায়ন করে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যহীন জীবনের পথিক হচ্ছে মানুষেরা। কারণ সমাজ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, রাষ্ট্র তাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত মূল্যায়ন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মস্তিষ্ক সচলভাবে কারো না কারো স্বার্থ পূরণে কাজে লাগে।
যেমন যদি এটা আঞ্চলিক ভাষায় বলি,
শরীরে যতদিন শক্তি আছে , ততদিন মূল্য আছে।
শরীরের শক্তি শেষ হয়ে গেলে, কেউ কাওকে মূল্যায়ন করে না। মানুষ মুহূর্তের মধ্যে অতীত ভুলে যায়। ভুলে যায় যেই মানুষটিকে আজ আমি অবহেলা করছি, সেই মানুষটি এক সময় আমার উপকার করেছিলো। আর সেই সব বাস্তবতার সম্মুখে শিক্ষা হিসেবে তুলে ধরার জন্য, আল্লাহ- তায়ালা রাজাকে ফকির, এবং ফকিরকে রাজায় পরিণত করেছেন। এরকম অগণিত প্রমাণ ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায়। আর সেই জন্যই শিল্পী সাধকরা বলে থাকেন,
সময় গেলে সাধন হবে না।
উক্ত কথাটির বিশ্লেষণ, অনেক গভীর। তাই আমি সেই বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। আমি শুধু মানুষের জীবনের পরিণতির চিত্রটা, আমি আমার কলমের ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করছি।
এই দুনিয়াতে মানুষের শরীরে যতক্ষণ শক্তি থাকবে চলার মতো,মানুষের স্বার্থ পূরণ এবং প্রিয়জনদের চাহিদা পূরণ করার কাজে আসবে, ঠিক একটি মানুষের মূল্যায়ন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত। যখন মস্তিষ্কে চিন্তা-শক্তির অবাক দেখা দেবে, শরীর অচল হয়ে পরবে,কাজ করার বা কারো স্বার্থ পূরণের কোন ক্ষমতা থাকবে না, তখন আর সমাজ তার সঠিক মূল্যায়ন করবেন। এটাই বাস্তবতা, মানুষ যখন অচল হয়ে পরে,অন্যের অধীনস্থ জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়, তখন সে সমাজ এবং পরিবারের কাছে ভারি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে শুরু হয় অবহেলিত লাঞ্ছিত জীবন। আর তখন বাধ্য হয় আল্লাহ-তায়ালার কাছে নিজের মৃত্যু নিজে কামনা করতে। এটাই বাস্তব, এটাই সমাজের চলমান প্রতিচ্ছবি, এটাই আমার দেখা বাস্তবতার অদৃশ্য চিত্র। যাক কলমের ভাষায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এক পথ পৃথিবীর, অদ্ভুত জীব আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ।